
নির্বাচনের নির্দিষ্ট রোডম্যাপ ও রাজনৈতিক মামলাগুলো নিয়ে আজ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে বৈঠকে বসেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। রাজধানীর যমুনা টাওয়ারে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সরকারের সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্নোত্তর ও পর্যালোচনা হয়।
সরকারের জবাব:
সরকার জানায়, গত ৩ মাসে নতুন গঠিত পাবলিক প্রসিকিউটর ও সরকারি আইনজীবী টিমের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ৭,০০০-এর বেশি মামলা প্রত্যাহার হয়েছে। প্রায় ১৬,০০০ মামলা তালিকাভুক্ত আছে। সবকিছু দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে, এরচেয়ে দ্রুত মীমাংসা বাস্তবসম্ভব নয়।
বিএনপি নেতারা সরকারের অগ্রগতি দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং দ্রুত বিচার প্রত্যাশা করেন।
সরকারের জবাব:
সরকারের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদাহরণ তুলে ধরে দেখানো হয়, নিয়োগ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএনপি সংশ্লিষ্টদেরকেও প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, অনেক জায়গায় সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়োগ বিএনপি সংশ্লিষ্টদেরই হয়েছে।
বিএনপি তাদের দীর্ঘ ১৬ বছরের নিপীড়নের কথা উল্লেখ করলে, সরকার পক্ষ থেকে সহমর্মিতা ও কৃতজ্ঞতা জানানো হয়।
সরকারের জবাব:
বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুতগতিতে চলছে। আইসিটি আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে একটি নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার, যা বিচার দ্রুততর করবে। চূড়ান্ত তদন্তের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে, শিগগিরই তা ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হবে।
সরকারের জবাব:
প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্ট করে জানান, “আমার মুখেই সরকারের কমিটমেন্ট,” এবং উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত মতামত বিভ্রান্তিকর নয়। তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, নির্বাচন ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬-এর মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, জুন পর্যন্ত সময় দেওয়া মানে বিলম্ব নয়। ডিসেম্বরে নির্বাচন করাই সরকারের মূল লক্ষ্য।
সরকারের জবাব:
সরকার জানিয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের মতামত বিশ্লেষণ করে শিগগিরই ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি চার্টার প্রকাশ করা হবে। এতে দলগুলোর অবস্থান স্পষ্টভাবে প্রকাশ করা হবে—কে কতটুকু সংস্কারে একমত, কে না এবং কোন প্রক্রিয়ায় সংস্কার হবে।
সরকারের জবাব:
সরকার ব্যাখ্যা করে, সংস্কার চূড়ান্ত হলেও আইনি ও নীতিগত বাস্তবায়নে কিছু সময় প্রয়োজন। উদাহরণ হিসেবে, ডিজিটাল সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে ২৩টি খসড়া করতে হয়েছে, বহু পক্ষের মতামত নিতে হয়েছে। ফলে, সংস্কার মানেই সঙ্গে সঙ্গে বাস্তবায়ন—তা নয়।
তবে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন এই তিনটিই সমান অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যেই নির্বাচন হবে।
বৈঠক শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন,
“আমরা একবারেই সন্তুষ্ট নই। প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের কোনো নির্দিষ্ট ডেডলাইন জানাননি।”
বৈঠকে প্রতিটি বিষয়ের পরিষ্কার ও সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যার পরও বিএনপির অসন্তোষ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা।
সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে—ডিসেম্বর থেকে জুন সময়কাল “ডিলেই নয়, প্রস্তুতির জন্য সময়”।
বিচার ও সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করতে সরকারের প্রতিশ্রুতি দৃঢ় বলেও বারবার জানানো হয়েছে।
শেষ কথা:
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে—সরকারের এই দৃঢ় বার্তা ও প্রধান উপদেষ্টার আশ্বাস যথেষ্ট স্পষ্ট হলেও, বিএনপির আস্থা অর্জনে সেটি কতটুকু কার্যকর হবে, সেটিই এখন দেখার বিষয়।