
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাবেক জেলা ছাত্রদল সভাপতি ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত জাকির খান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তার বিরুদ্ধে দীর্ঘ সময় ধরে মাদক ও সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট ৩৩টি মামলা থাকলেও, এর মধ্যে ৩২টি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। সর্বশেষ মামলায় জামিনের মাধ্যমে মুক্তি পাওয়ার পর বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে তাকে বরণ করে নেওয়া হয়, যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
জাকির খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের তালিকা দীর্ঘ। ১৯৯৫ সালে দেওভোগের কুখ্যাত সন্ত্রাসী দয়াল মাসুদকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে তার ‘সন্ত্রাসী পরিচিতি’র সূচনা হয়। এরপর ১৯৯৬ সালে খাজা সুপার মার্কেটে হামলা ও ভাঙচুরের মামলায় তিনি ৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন। তবে রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় সে সময় মুক্তি পান।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে, ১৯৯৬ সালের শেষদিকে চাঁদা দাবির মামলায় আরও ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় তার। ওই সরকারের আমলে প্রায় চার বছর কারাগারে ছিলেন তিনি।
১৯৯৯ সালে স্বল্প সময়ের জন্য কারামুক্ত হয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে আসেন জাকির। পরবর্তীতে ২০০০ সালে টানবাজার ও নিমতলী যৌনপল্লি উচ্ছেদ অভিযানের ফলে তার পরিবারের আর্থিক অবস্থা বিপর্যস্ত হয়।
২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে অস্ত্রের মহড়া প্রদর্শনের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার হন জাকির খান। বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পরও তাকে পাঁচ মাস কারাবাসে থাকতে হয়।
২০০৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ বিএনপি নেতা তৈমূর আলম খন্দকারের ভাই ও তৎকালীন বিএকেএমইএর সহসভাপতি সাব্বির আলম খন্দকার হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি ছিলেন জাকির। এরপর দীর্ঘদিন তিনি বিদেশে পলাতক ছিলেন।
সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর রাজনীতিতে তার ফেরার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন মহল আশঙ্কা প্রকাশ করছে, তার প্রত্যাবর্তনের ফলে নারায়ণগঞ্জে মাদক ও সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য আবারও বাড়তে পারে।
স্থানীয় রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—বারবার ভয়ঙ্কর অপরাধে অভিযুক্ত একজন ব্যক্তি কীভাবে বারবার মুক্তি পেয়ে রাজনৈতিক সংবর্ধনায় ভূষিত হন?
এদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, জাকির খানের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছে এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা রোধে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে।